লোকসভা নির্বাচন 2024
ভারতে সাত দফা লোকসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পর পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক সহিংসতা শুরু হয়েছে।
গতকাল শনিবার ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। নদীয়ার কালীগঞ্জে বিজেপি কর্মী হাফিজুল শেখকে নির্মমভাবে খুন করা হয়। ঘটনাস্থলে তিনি তৃণমূলের ১০-১২ জন কর্মীর দ্বারা আক্রান্ত হন। চায়ের দোকানের পাশে ক্যারাম খেলার সময় তাঁকে গুলি করা হয় এবং তারপর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
হাফিজুল শেখের পরিবার বরাবর সিপিএমের সমর্থক ছিল। তাঁর ভাই সিপিএমের টিকিটে গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হয়েছেন। হাফিজুল তৃণমূলের ভয়ে কয়েক মাস আগে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। তবে তৃণমূলের হাত থেকে রেহাই পাননি। তাঁর মৃত্যুর পর গ্রামবাসী তৃণমূলকে দায়ী করে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তারা লাশ নিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। কিন্তু তৃণমূল দাবি করেছে, হাফিজুল পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন হয়েছেন।
পুলিশ হাফিজুলের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যায় এবং পরবর্তী সময়ে তা পরিবারের কাছে ফেরত দেয়। নদীয়ার ঘটনার পর সন্দেশখালিতেও সহিংসতা দেখা যায়। সেখানে পুলিশ সাধন নন্দী নামের এক ব্যক্তিকে বিনা দোষে আটক করার চেষ্টা করে। গ্রামবাসীরা পুলিশ থেকে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এরপর পুলিশি অত্যাচারের প্রতিবাদে সন্দেশখালির নারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন এবং প্রশাসন ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে।
এছাড়াও বারাকপুরে বোমা ফাটানোর ঘটনা ঘটে। বেলেঘাটা ও বিধাননগরেও হামলার খবর পাওয়া যায়। ফলে বহু এলাকায় বিজেপি কর্মীরা বাড়িছাড়া হয়েছেন। বিজেপির দাবি, বুথফেরত জরিপে তৃণমূলের পরাজয়ের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, তাই শাসক দল বিজেপি সমর্থকদের ওপর হামলা শুরু করেছে।
এই সহিংসতার প্রতিক্রিয়ায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে উত্তর প্রদেশের স্টাইলে টিটমেন্ট করা হবে এবং এনকাউন্টার হবে। অপরদিকে, কংগ্রেসের রাজ্য সভাপতি অধীর চৌধুরী তৃণমূলের প্রতিহিংসার রাজনীতির সমালোচনা করেছেন এবং পুলিশকে সহযোগিতার অভিযোগ এনেছেন।
পশ্চিমবঙ্গে সহিংসতার এই পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে। নির্বাচনের পর রাজনৈতিক সংঘর্ষের এই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে সাধারণ মানুষের জীবনে এর প্রভাব ব্যাপকভাবে পড়ছে। এই সহিংসতা শুধু রাজনৈতিক দলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না, বরং সাধারণ মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও শান্তি বিঘ্নিত করছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে সংঘর্ষের এই ধারা অব্যাহত থাকলে রাজ্যের সামাজিক পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে যেতে পারে।
রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রাজ্যের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকেও সংযম প্রদর্শন করে এবং সংলাপের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে। সহিংসতা কোন সমাধান নয়, বরং তা সমস্যাকে আরও জটিল করে তোলে। অতএব, শান্তি ও সুশৃঙ্খল পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সকল পক্ষের সহযোগিতা প্রয়োজন।
কোন মন্তব্য নেই
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন